Bismillah Garden

Bismillah Garden
বিসমিল্লাহ গার্ডেনে ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ....আমাদের সাথেই থাকবেন

ওহুদের যুদ্ধ ওহুদের যুদ্ধের ফলাফল ওহুদের শিক্ষা উহুদের যুদ্ধ

 ওহুদের যুদ্ধ

বদরের যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশােধ গ্রহণের জন্য কুরাইশরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বদর যুদ্ধে যে
সকল নারী তার আপন জনকে হারিয়েছিল তারা তার প্রতিশােধ নেয়ার জন্য প্রায় সবাই
পুরুষদের সাথে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে লাগল। এবারকার সেনা প্রধান আবু
সুফিয়ান স্বয়ং। অচিরেই একটা বিরাট বাহিনী প্রস্তুত করে কুরাইশরা যুদ্ধাভিযানের জন্য প্রস্তুত
হয়ে গেল। ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) এসে হুযুরে পাক (স)-কে এ সংবাদ অবহিত করেন।
হুযূর (স) সাহাবীদের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করে কুরাইশদেরকে প্রতিরােধ করার সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করলেন । ইতােমধ্যে কাফের সৈন্যবাহিনী প্রায় মদীনার দ্বারপ্রান্তে এসে উপনীত হল।
কাফের বাহিনীতে তিন সহস্র সৈন্য। রাসূলুল্লাহ (স) মাত্র এক হাজার মুজাহিদসহ দ্রুত শত্রু
সৈন্যের মােকাবেলার বের হয়ে ওহুদ প্রান্তরে উপনীত হয়ে যথাস্থানে শিবির স্থাপন করলেন ।
অবশ্য ওহুদ প্রান্তে পৌঁছার পূর্বেই তাঁর একহাজার সৈন্যের প্রায় তিনশত সৈন্য মুনাফিক
আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর নেতৃত্বে বের হয়ে গেল । তখন মুজাহিদ বাহীনীর সৈন্য সংখ্যা দাঁড়াল।
মাত্র সাত’শ
 ওহুদের যুদ্ধ  ওহুদের যুদ্ধের ফলাফল  ওহুদের শিক্ষা উহুদের যুদ্ধ 

কুরাইশ বাহিনী সামনে ওহুদ প্রান্তরে মুসলিম বাহিনীর শিবির

দেখে আর সামনে অগ্রসর না
হয়ে ওহুদ পাহাড়ের অপর প্রান্তে শিবির স্থাপন করল ।
রাসূলুল্লাহ (স) মুসলিম বাহিনীকে ওহুদ পাহাড়ের দিকে পৃষ্ঠ রেখে দাঁড় করালেন। মুসলিম
বাহিনীর পিছনে একটি গিরিপথ ছিল। দূরদর্শী নবীজী (স) পিছন দিক পাহারার জন্য আবদুল্লাহ
ইবনে জোবায়ের (রা)-এর নেতৃত্বে সত্তরজন সুদক্ষ তীরন্দাজ সৈন্যকে এ গিরিপথের মুখে
মােতায়েন করে। তাদেরকে নির্দেশ দেন। যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পরেও নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত
তারা যেন নিজেদের স্থান কোন ভাবেই পরিত্যাগ না করে।
শত্রু বাহিনী ও সর্বপ্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করল । মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ, ইকরামা
ইবনে আবু জাহল, সাফোয়ান ইবনে উমাইয়া এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাবিয়া প্রমুখ বড় বড়
যােদ্ধা যুদ্ধ পরিচালনার ভার গ্রহণ করল ।

মুসলিম বাহিনীর ডানবাহু পরিচালনার ভার গ্রহণ করলেন জোবায়ের ইবনে আওয়াম এবং
বামবাহু পরিচালনার ভার ন্যস্ত হল মুনজের ইবনে আমেরের উপর। বাহিনীর মূল পতাকাধারী
নিযুক্ত হলেন মােসআব ইবনে উমাইর (রা)।

কাফিরদের পতাকাধারী অগ্রসর হয়ে বলল, আমার সাথে যুদ্ধ করার মত কোন মুসলমান
আছে কি? যদি থাকে তাহলে সামনে এসে হয় আমাকে হত্যা কর, নতুবা নিজের হত্যা ডেকে
আন। হযরত আলী (রা) তার সাথে মােকাবেলার জন্য অগ্রসর হলে কাফের যােদ্ধা তাঁকে
আঘাত হানল । আলী (রা) তা প্রতিহত করে এক আঘাতেই তার জীবন সাঙ্গ করলেন ।
নিহতের পুত্র দৌড়ে এসে পতাকা ধারণ করল । হযরত হামজাহ (রা) ছুটে গিয়ে এক আঘাতে
তাকেও সাঙ্গ করলেন একের পর এক কাফির সৈন্য নিহত হচ্ছিল। ঠিক এমনি মুহূর্তে কাফির
সৈন্য ওহশী আড়াল থেকে বর্শা নিক্ষেপ করে মহাবীর হামজাহ (রা)-কে শহীদ করে ফেলল।
তৎক্ষণাৎ হযরত আলী (রা) ও আবু দাজানা (রা) সিংহ বিক্ৰমে বিপক্ষের উপর ঝাপিয়ে
পড়লেন। অপরদিকে সাহাবী হানজালা (রা) শত্রু সৈন্য ধ্বংস করতে করতে বীর বিক্রমে আৰু
সুফিয়ানের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন । অতর্কিত সাদ্দাদ ইবনে আসােয়াদ তার উপর হামলা
করলে তিনি শাহাদত বরণ করেন।

রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট হতে একখানা তরবারী নিয়ে আবু দাজানা শত্রু সৈন্যের মধ্যে
প্রবেশ করে।

 সম্মুখে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দাকে দর্শন মাত্র তার মাথা বরাবর তরবারী
উত্তোলন করলেন, কিন্তু আঘাত না করে বলেন এ তরবারী রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রদত্ত সুতরাং
দুর্বল নারীর উপর এটা চালনা করলাম না। নতুবা তুমি আজ অবশ্যই জাহান্নামে প্রেরিত হতে
কিছুক্ষণের মধ্যেই মুসলিম বাহিনীর প্রবল হামলায় শত্রুপক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। তারা আররণক্ষেত্রে দণ্ডায়মান থাকতে না পেরে যে যেদিকে পারল ছুটে পালাল। ক্ষণকাল মধ্যে রণক্ষেত্রে শত্রুসৈন্য শূন্য হয়ে গেল। মুসলিম বাহিনীও শক্রপরিত্যক্ত মাল কুড়াতে শুরু করলেন।

 এ দৃশ্য অবলােকন করে যে সকল মুসলিম সেনা মুসলমানদের পশ্চাদ্ভাগে গরিপথ পাহারায় নিয়ােজিত ছিলেন, তাদেরও গনীমতের মাল সংগ্রহের আকাক্ষা জাগল। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ (স)-এর নির্দেশ অমান্য  করে শক্রদের মাল লুণ্ঠনে শরীক হলেন।
দূর থেকে শত্রু সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এদৃশ্য লক্ষ্য করলেন । তিনি ছিলেন
অত্যন্ত বিচক্ষণ সেনাপতি। তাই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এ উন্মুক্ত গিরিপথ দিয়ে প্রবেশ করে
মুসলিম বাহিনী উপর পিছন দিক থেকে হামলা করলেন। এ অবস্থা লক্ষ্য করে পলায়নপর শত্রু
সৈন্যরা প্রত্যাবর্তন করে মুসলমানদের সম্মুখে দাঁড়াল। ফলে মুসলিম বাহিনী শত্রুসেনার
দুদিকের হামলার মধ্যে পড়ে। এ কঠিন সমস্যায় পতিত হয়ে মুসলিম বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে
পড়লেন। এ সময় শত্রুপক্ষের একটি লােক সজোরে চিৎকার দিয়ে বলল, মুহাম্মদ
নিহত
হয়েছে। এ সংবাদ শুনে মুসলিম সেনাদের মনােবল একেবারেই ভেঙ্গে গেল । আর যুদ্ধ করা
বৃথা মনে করে কতক সৈন্য মদীনাভিমুখে রওয়ানা হল । কতক সৈন্য স্ব স্ব স্থানে যুদ্ধ করে
শহীদ হলেন। ঠিক সে মুহূর্তে ইবনে মালেক (রা) দূর হতে রাসূলুল্লাহ (স)-কে দেখতে পেয়ে
চীৎকার করে বলে উঠলেন, মুসলিম সৈন্যগণ! তােমাদের জন্য সুসংবাদ । আমাদের নবী জীবিত
আছেন।

হযরত ইবনে মালেক (রা)-এর একথায় প্রাণ সঞ্জীবনী শক্তির ন্যায় ভগ্নমনা মুসলিম
সৈন্যদের মন চাঙ্গা করে তুলল। 

যারা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে ছিল, তারা দ্রুত
ছুটে এসে হুযুরে পাক (স)-এর চারপার্শ্বে বেড়া তৈরি করে দাঁড়িয়ে গেলেন। অপরপক্ষে
কাফিররাও তাদের হামলা জোরদার করল। সাহাবী যিয়াদ (রা) রাসূলুল্লাহ (স)-কে নিজের
আড়ালে রেখে কতিপয় আনসারসহ লড়াই করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।
ঠিক এ মুহূর্তে দূর হতে এক পাষণ্ড কাফির রাসূলুল্লাহ (স)-এর দিকে একটি প্রস্তর খণ্ড
নিক্ষেপের আঘাতে রাসূলুল্লাহ (স) এর পবিত্র দান্দান মােবারক শহীদ হল । ঠিক একই মুহূর্তে
পাপিষ্ঠ ইবনে কুমাইয়া রাসূল (স) এর মস্তক লক্ষ্য করে তরবারীর প্রচণ্ড আঘাত হানলে
রাসূলুল্লাহ-এর পরিহিত লৌহ বর্মের দুটি পেরেখ তাঁর ললাটে গভীরভাবে গেঁথে গেলে
আঘাতের প্রচণ্ড ধাক্কায় তিনি একটি পর্বত গর্তে কাত হয়ে পড়ে গেলেন। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ
(স)-এর পবিত্র মুখ হতে বের হল, সে সম্প্রদায়ের কি কখনও কল্যাণ হতে পারে যারা তাদের
নবীর উপরে আঘাত করে।

হযরত আবু ওবায়দা ইবনে জারযাহ (রা) দৌড়ে এসে স্বীয় দন্ত দ্বারা কামড়িয়ে রাসূলুল্লাহ
(স)-এর ললাটদেশ হতে পেরেক দুটি তুলে ফেললেন। 

নবীজী (স)-এ দন্ত মােবারক তুলতে
গিয়ে তার নিজের দুটি দাঁত পড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (স)-এর দেহ মােবারক হতে অবিরাম
ধারায় রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। সাহাবা আবু সাঈদ (রা)-এর বৃদ্ধ মাতা নিজের মুখ দিয়ে এ
রক্ত চুষে নিতেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (স) স্বহস্তে রক্ত মুছতে মুছতে বলেন, হে মাবুদ! তুমি এ
হতভাগ্য জাতিকে ক্ষমা কর। কেননা, এরা কি করছে তা নিজেরাই বুঝতে পারছে না। এ সময়
কুরাইশরা চতুর্দিক হতে রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি অজস্র ধারায় তীর ছুড়ছিল। হযরত আবূ
দাজানা স্বীয় দেহকে ঢাল বানিয়ে সমস্ত তার নিজের পৃষ্ঠে উপরে গ্রহণ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ
(স)-এর বক্ষের সাথে স্বীয় বক্ষ মিলিয়ে রাসূলুল্লাহ (স)-কে শত্রুর আঘাত থেকে বাঁচিয়ে
রাখেছিলেন। আবু দাজানা (রা)-এর পৃষ্টদেশ তীরের আঘাতে ঝঝারা হয়ে গিয়েছিল, সেদিকে
এতটুকুমাত্র খেয়াল না করে তিনি দু'হাতে নবীজী (স)-কে আকড়াইয়া ধরে রেখেছিলেন।
এক পাপিষ্ঠ কাফির হঠাৎ রাসূলুল্লাহ (স)-এর উপরে তরবারী দ্বারা আঘাত করছিল।
হযরত তালহা (রা) স্বীয় হস্ত দ্বারা তা প্রতিহত করলেন। তরবারীর আঘাতে তাঁর হাত দ্বিখণ্ডিত
হয়ে গেল। হযরত শাম্মাস (রা) রাসূলুল্লাহ (স)-এর সম্মুখে তরবারি চালাতে চালাতে আহত
হয়ে পড়লেন। তাঁকে মুমূর্ষ অবস্থায় উম্মে সালমার নিকট পাঠিয়ে দেয়া হল। তথায় এক দিনএক রাত জীবিত থেকে তিনি জান্নাতবাসী হলেন। হযরত কাতাদাহ (রা) ছিলেন একেবারে
রাসূলুল্লাহ (স)-এর পার্শ্বে দণ্ডায়মান। হঠাৎ একটি তীর এসে রাসূলুল্লাহ (স)-এর দেহে বিদ্ধ
হবার উপক্রম হলে হযরত কাতাদাহ স্বীয় দেহ দ্বারা এ তীর প্রতিরােধ করলেন। তীরটি তার
একটি চোখ বিদ্ধ হয়ে চোখটি বের হয়ে ঝলিতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (স) স্বীয়হস্ত মােবারক
দ্বারা চক্ষুটি যথাস্থানে স্থাপন করে দোয়া করলেন, আল্লাহর রহমতে চোখটি আবার পূর্বানুরূপ
হয়ে গেল। যুদ্ধক্ষেত্রের এক প্রান্তে যেখানে মুসলিম বাহিনীর কেউ ছিল না, কাফির রমণীরা
শহীদ মুসলিম সেনাদের লাশ তালাশ করে লাশের নাক-চক্ষু কানগুলো কেটে ফেলছিল। আবু
সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা হামযাহ (রা)-এর মৃতদেহের নিকট গিয়ে তার দেহ ফেড়ে কলিজা বের
করে তা দাঁতে চিবাল। তাঁর নাসিকা কর্ণ কেটে ফেলল। বদর যুদ্ধে হযরত হামযাহ (রা)
ওবাকে হত্যা করেছিলেন, হিন্দা সে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করল।

এক পর্যায়ে মুসলিম সেনাগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে কেবলমাত্র কতিপয় মুসলিম রমণী
রাসূলুল্লাহ (স)-কে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখলেন। এ সময় উম্মে আম্মারাহ নাম্নী জনৈকা
মহিলা তরবারী হস্তে রাসূলুল্লাহ (স)-এর দেহরক্ষী হয়ে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি
ইবনে কুমাইয়ার মস্তকে তরবারী দ্বারা প্রচণ্ড আঘাত হানছিলেন।
মুসলিম রমনীরা জঙ্গে ওহােদে প্রাণপণে মুসলিম সেনাবাহিনীর সেবা-যত্ন করেছিলেন।
হযরত আয়েশা, উম্মে সলীম, উম্মে আনাস, উম্মে সুলীত, উম্মে আবু সাঈদ (রা) প্রমুখ রমণীবৃন্দ
মােশক ভর্তি পানি নিয়ে, যুদ্ধক্লান্ত সৈন্যদেরকে পানি পান করান এবং সৈনিকদের ক্ষতস্থান
বেঁধে দিয়ে এবং শুক্রর প্রতি আক্রমণের প্রেরণা যুগিয়ে তারা সেদিন যে কীর্তি প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন তা ইসলামের ইতিহাসকে মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত করে রেখেছে। মহাবীর
হামযাহ (রা)-এর সুযােগ্য ভগ্নি হযরত সুফিয়া (রা) হাতে বল্লম নিয়ে সমগ্র রণক্ষেত্র প্রদক্ষিণ
করে করে মুসলিমবাহিনীর উৎসাহ যােগাচ্ছিলেন এবং পলায়মান মুসলিম সেনাগণকে বাধা
প্রদান করছিলেন।

যখন তিনি স্বীয় ভ্রাতা হরত হামযাহ (রা)-এর লাশ ও নাসিকা, কর্ণ কর্তিতাবস্থায় দেখতে
পেলেন, তখন অসীম মনােবল, ধৈর্যের সাথে নিকটে বসে-ইন্না লিল্লা-হি অইন্না-ইলাইহি
রা-জিউন মুখে উচ্চারণ করে ভ্রাতার জন্য দোয়া করলেন।
হযরত ফাতেমা (রা) রণক্ষেত্রে উপনীত হয়ে যখন পিতাকে জীবিত দেখলেন তখন
আনন্দের আতিশয্যে পিতার কণ্ঠ জড়িয়ে ধরেন তার আখিযুগল বেয়ে আনন্দাশ্রুনির্গত হতে
লাগল, এ সময়ে হযরত আলী (রা) ঢাল ভরে পানি এনে রাসূলুল্লাহ্ (স)-এর ক্ষতস্থানে
ঢালছিলেন এবং হযরত ফাতেমা (রা) এ পানি দিয়ে ক্ষতস্থানের রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করছিলেন।
হুযূরে পাক (সা)-এর রক্ত নির্গত হওয়া যখন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছিল না, তখন হযরত ফাতেমা
(রা) চাটাই পুড়ে এর ছাই আহত স্থানে লাগিয়ে গিয়ে রক্তের ধারা বন্ধ করলেন।
রাসূলুল্লাহ (স) মুহাম্মদ ইবনে মুসলেমাকে রণক্ষেত্রে গমন করে মুসলিম শহীদদেরকে
দেখে আসতে বলেন। তিনি  গিয়ে দেখতে পেলেন, সাদ ইবনে রাবিয়া (রা) মুমুর্মু
অবস্থায় পড়ে আছেন। মুসলেমাকে দেখে তিনি বলেন, ভাই, রাসূলুল্লাহ (স)-কে ও আমার
মুসলিম ভাইদেরকে আমার শেষ সালাম পৌছে দিও। আর তাদেরকে বল একজন মুসলমানের
দেহে প্রাণ থাকতে যেন আমাদের রাসূলুল্লাহ (স)- )-এর উপর শত্রুরা আঘাত হানতে না পারে।
এ পর্যন্ত বলে সা’দ (রা)-এর বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। ইবনে মুসলেমা (রা)-এর চোখের সামনেই
তাঁর প্রাণ বায়ু বের হয়ে জান্নাতে চলে গেল। অতপর ইবনে মুসলেমা অন্যান্য মুসলিম
শহীদদের দর্শন করে এসে রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট সা'দ (রা)-এর ঘটনা বর্ণনা করলে,
রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, আল্লাহ্ তাকে রহম করুন। সে জীবন ও মন দিয়ে আল্লাহ ও রাসূলকে
মহব্বত করে গিয়াছে।

ওহােদ যুদ্ধের সর্বশেষ পর্যায়ে যুদ্ধের মােড় পুনরায় মুসলমানদের পক্ষে ঘুরে গেল।

রাসূলুল্লাহ (স)-এর মৃত্যুর গুজব প্রমাণিত হওয়ায় মুসলিম সেনাগণ নতুনউদ্যমে দৃঢ়তার সাথেঘুরে দাঁড়িয়ে গেলেন। কুরাইশ সৈন্যরা আর সামনে অগ্রসর হতে সাহসী হল না। তারা
পশ্চাদপসরণ করল, এবং যাবার সময়ে বলে গেল, তােমাদের সাথে আবার সাক্ষাত হবে।
হযরত ওমর (রা) জবাবে বলেন, আল্লাহর রহমতে আমরাও প্রস্তুত।
মূলতঃ এ যুদ্ধে জয় পরাজয় নির্ণয় হয়নি। কাফিররা যদিও এক পর্যায়ে যুদ্ধের ফল তাদের
পক্ষে টেনে নেয়ার উপক্রম করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। কেননা, তাদের
এবারকার যুদ্ধে উদ্দেশ্য ছিল, যে কোনভাবে রাসূলুল্লাহ (স)-কে হত্যা করা এবং মুসলিম
শক্তিকে নির্মূল করা । দু’ উদ্দেশ্যের একটিও সফল না হওয়ায়ই আবু সুফিয়ান এরূপ বলেছিল ।
কুরাইশ কাফিরদের নির্গমনের পর রাসূলুল্লাহ (স) প্রেরণ করলেন যে, দেখ তারা
আমাদের অরক্ষিত মদীনার দিকে যায় কিনা ।কিন্তু দেখা গেল, তারা মক্কায় পথ ধরেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (স) নিশ্চিন্ত হলেন।

ওহুদ যুদ্ধে মােট সত্তরজন মুসলমান শাহাদাতবরণ করেছিলেন ।

 এত অধিক শহীদের
কাফনের কাপড় যােগাড় না থাকায় দু তিনজনকে এক কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করা হল ।
হযরত আমীর হামযাহ (রা) লাশ একখানা ছােট চাদর দ্বারা ঢাকতে গিয়ে তাঁর মস্তক আবৃত
হল, কিন্তু দু' পা অনাবৃত থাকায় তার উপরে ঘাস দিয়ে ঢেকে দেয়া হল।
ওহুদের যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে প্রত্যাবর্তন করে রাসূলুল্লাহ (স) যখন মদীনায় প্রবেশ করলেন,
তখন পথের দু'ধারে মদীনার মহিলারা আপনাপন মুজাহিদদের কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।
একজন আনসার রমণীর প্রশ্নের উত্তরে বলা হল, তােমার স্বামী-পিতা-ভ্রাতা-সকলেই
শাহাদাতবরণ করেছেন। রমণী বলেন, সেজন্য দুঃখ নেই, কিন্তু তােমরা বল, আমাদের রাসূল
(স)-এর খবর  কি? তারা জবাব দিলেন, হাঁ আল্লাহর রহমতে তিনি নিরাপদে আছেন ।
রমণী বলেন, তােমরা তাঁকে একবার আমাকে দেখাও। আমি মনে শান্তিলাভ করি। রাসূলুল্লাহ
(স)-কে দেখার পর এ মহিলা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নিরাপদে থাকলে আমাদের
কাছে অন্য যে কোন বিপদই তুচ্ছ।

...........................................

MD. AZIZUL ISLAM

..............................

কোন মন্তব্য নেই

Thank you for your comment.

ক্ষমতা নিয়ে ওয়াজ | মুফতি আমির হামজা নতুন ওয়াজ | Khomotar Waz | Khomotar Bahaduri Waz

ক্ষমতা নিয়ে ওয়াজ | মুফতি আমির হামজা নতুন ওয়াজ | Khomotar Waz | Khomotar Bahaduri Waz।ইসলাম ধর্মের প্রচারে ও মানুষকে সঠিক পথে চলার জন্য প্...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.